কতকগুলি প্রশ্ন

কতকগুলি প্রশ্ন, যা আজও রহস্যাবৃত থেকে গেছে।
=================================

হারাধনের দশটি ছেলে
          ঘোরে পাড়াময়,
একটি কোথা হারিয়ে গেল
          রইল বাকি নয়।

♦প্রশ্ন-১ঃ হারাধনবাবু কি আদৌ পুলিশের মিসিং স্কোয়াডে সন্তান হারিয়ে যাওয়া নিয়ে কোন রিপোর্ট লিখিয়েছিলেন? যদি রিপোর্ট করে থাকেন, পুলিশের তরফ থেকে কী অ্যাকশান নেওয়া হয়েছিল? আর রিপোর্ট না করে থাকলে একজন পিতা হিসেবে হারাধনবাবুর এহেন গাছাড়া মনোভাবের কারণ কী?
****************

হারাধনের নয়টি ছেলে
          কাটতে গেল কাঠ,
একটি কেটে দু’খান হল
          রইল বাকি আট।

♦প্রশ্ন-২ঃ একটা ছেলে কাঠ কাটতে গিয়ে দু টুকরো হয়ে গেল, এও কি খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য? এর পিছনেও কোন একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কী বলা হয়েছিল? পুলিশী তদন্ত কতদূর এগিয়েছিল?
******************

হারাধনের আটটি ছেলে
          বসলো খেতে ভাত,
একটির পেট ফেটে গেল
          রইল বাকি সাত।

♦প্রশ্ন-৩ঃ ভাত খেতে গিয়ে বিষম লাগতে পারে, অতিরিক্ত খেয়ে বদহজম হয়েও অনেকে মারা যেতে পারে। শুনেছি স্বয়ং সেক্সপীয়ারই নাকি নিমন্ত্রণ বাড়িতে অতিরিক্ত খেয়ে মারা গেছিলেন।কিন্তু পেট ফেটে যাওয়ার কোন দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আছে বলে মনে হয়না। এও এক রহস্যজনক মৃত্যু, যার কোন সদুত্তর পুলিশের কাছ থেকে আজও পাওয়া যায়নি।
******************

হারাধনের সাতটি ছেলে
          গেল জলাশয়,
একটি সেথা ডুবে ম’ল
          রইল বাকি ছয়।

♦প্রশ্ন-৪ঃ হারাধনবাবুর ছেলে কি সাঁতার জানতনা? যদি না জানত, তবে যখন সে জলাশয়ে ডুবে যাচ্ছিল, তখন বাকি ছজন কী করছিল? ভাইকে বাঁচানোর চেষ্টা কি করেছিল? এ সম্পর্কে বিশদ কিছুই জানা যায়নি। এই লাশটির পোস্টমর্টেম রিপোর্টও তদন্তে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারত।
**********************

হারাধনের ছয়টি ছেলে
          চড়তে গেল গাছ,
একটি ম’ল পিছলে পড়ে
          রইল বাকি পাঁচ।

♦প্রশ্ন-৫ঃ গাছ থেকে পড়ে মরে যাওয়ার অবশ্য অনেক উদাহরণ আছে। বেকায়দা চোট লাগলে মারা যেতেই পারে। কিন্তু এখানেও বাকি পাঁচ ভাইয়ের ভূমিকা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়।
********************

হারাধনের পাঁচটি ছেলে
          গেল বনের ধার,
একটি গেল বাঘের পেটে
          রইল বাকি চার।

♦প্রশ্ন-৬ঃ যে বনে বাঘ আছে, সেরকম বনের ধারে বেড়াতে যাওয়ার কি মানে? নরখাদক বাঘের উপদ্রবের কোন খবর কি বন-আধিকারিকের কাছে ছিল? তাঁর রিপোর্ট থেকে কী জানা গেছে? কোন সিসি টিভি ফুটেজ কি পাওয়া গেছিল?
********************

হারাধনের চারটি ছেলে
          নাচে ধিন ধিন,
একটি ম’ল আছাড় খেয়ে
          রইল বাকি তিন।

♦প্রশ্ন-৭ঃ এই মৃত্যুটাকে তো একেবারেই মেনে নেওয়া যায়না। হার্টের কোন মারাত্মক সমস্যা না থাকলে কেউ মেঝেতে পিছলে পড়ে মারা গেছে, এমন ঘটনা কেউ কখনো শুনেছে বলে মনে হয়না। হাত-পা ভাঙতে পারে, মাথায় আঘাত লাগতে পারে, তাই বলে মৃত্যু?
**********************

হারাধনের তিনটি ছেলে
          ধরতে গেল রুই,
একটি খেলো বোয়াল মাছে
          রইল বাকি দুই।

♦প্রশ্ন-৮ঃ এটা তো পরিষ্কার একটা গল্প। পুলিশের যোগসাজশ ছাড়া এরকম একটা মৃত্যুর ঘটনা অফিসিয়ালি কীভাবে নথিভুক্ত হল, তা আজও ভেবে পাইনা। আর যদি তর্কের খাতিরে নাহয় মেনেই নিলাম যে ত্রৈলোক্যনাথের কুমির যদি বেগুনওয়ালি বুড়িকে গিলে খেতে পারে, তবে যোগীন্দ্রনাথের বোয়াল মাছও হারাধনবাবুর পুত্রকে গিলে খাওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু প্রশ্ন হল, পুলিশ কেন সেক্ষেত্রে ডমরুধরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে, ডুবুরি নামিয়ে বা জল ছেঁচে সেই বোয়াল মাছকে ধরার ব্যবস্থা করলনা? বলা যায় কি, হয়ত বোয়ালের পেট কাটলে সেই ছেলেকেও পেটের মধ্যে চু-কিতকিত খেলতে দেখা যেত।
*********************

হারাধনের দুইটি ছেলে
          মারতে গেল ভেক,
একটি ম’ল সাপের বিষে
          রইল বাকি এক।

♦প্রশ্ন-৯ঃ এইখানে এসেই কিন্তু সমস্ত রহস্য মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। যে কোন সুস্থ বুদ্ধির মানুষই বুঝে যাবে যে হারাধনবাবুর সমস্ত সম্পত্তি একা ভোগ করার লোভে বেঁচে থাকা অন্তিম সন্তানই বাকি নজনের মৃত্যুর পিছনে কোন না কোন ভাবে যুক্ত ছিল। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে পুলিশ কোন তদন্তই করেনি।
**********************

হারাধনের একটি ছেলে
          কাঁদে ভেউ ভেউ,
মনের দুঃখে বনে গেল
          রইল না আর কেউ।

✅ সিদ্ধান্তঃ এই কান্না যে সম্পূর্ণ লোক দেখানো, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিন্তু বনবাসে যাওয়ার পিছনে কী কারণ থাকতে পারে, তা জানা যায়নি। 

কোন কোন মহলের মতে, হারাধনবাবুর সকলের অজ্ঞাতে একটি দ্বিতীয় বিবাহ করেছিলেন। শোনা যায় সেই দ্বিতীয় পক্ষের একটি মাত্র সন্তান ছিল। আর হারাধনবাবুর বিপুল সম্পত্তিতে আগের পক্ষের একজনকেও ভাগ বসাতে না দিতে ওই দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীই এই সমস্ত ঘটনা ঘটিয়েছিলেন বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন। 

সত্যাসত্য যাচাই করতে গেলে হারাধনবাবুর প্রথমপক্ষের একমাত্র জীবিত সন্তান, যে বনবাসে গিয়েছিল, তাকে খুঁজে পাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। কারও কাছে তার সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে জানাতে ভুলবেননা। 

♪ ধন্যবাদ। লকডাউন মেনে বাড়িতে থাকুন। আর এইসব আলতুফালতু লেখা পড়ে সময় কাটান।

====================

Comments

Popular posts from this blog

"হে মোর দুর্ভাগা দেশ"

’মরুবৃক্ষ'

"মনের মানুষ"