"পটল"


"কিরে তরুণ... পটল রাখিসনি?"
"ছিল দাদা... ঐ পুলিশের দল সব সব কিনে নিয়েছে।" 
"তাহলে একবার বিশুর দোকানটায় দেখি।"
"লাভ নেই। এই বাজারে কারোর কাছে পাবেন না।"
"কেন? বাজারের সব পটল কিনে নিয়েছে নাকি?"
"হ‍্যাঁ।"
"কেন রে? এত পটল দিয়ে কী করবে? এই লকডাউনের বাজারে পিকনিক করবে নাকি?"
"কে জানে! অন্য কিছু লাগবে?"
"হ‍্যাঁ... সবই পাঁচশ করে দিয়ে দে। বেশি নিয়ে লাভ কী? এই বাহানায় রোজ একটু বেরনো তো যায়। নাহলে সেই তো সারাদিন ঐ ঘরে বসে থাকো আর বউয়ের অভিযোগ শোনো। শালা আমার মধ্যে যে এত ত্রুটি আছে, লকডাউন না হলে জানতেই পারতাম না, বুঝলি?"
     তরুণ হাসে, "যা বলেছেন দাদা। আমারও একই অবস্থা। আর তুলনা কিসের সাথে? পচা আলু, পচা টমেটো। মাঝে মাঝে মনে পড়লে বিক্রি করতে বসা আলু, টমেটোগুলো দেখলেই রাগ হয়ে যায়।" 
"দেখিস.... রেগে কখনও যদি ছুড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হয় তো আমাকে আগে থেকে জানিয়ে দিস।"
"ঠিক আছে দাদা।" তরুণ হাঁসে। "মাছ নিলেন নাকি?"
"হ‍্যাঁ। আজ দেখলাম ভালো তেলাপিয়া উঠেছে। নিয়ে নিলাম।"
"কালকের ভোলা শেষ?"
"হ‍্যাঁ। বেশি নিই না তো। ফ্রিজে রেখে খেতে ভালো লাগে না।"
"সেই। কিন্তু দাদা, মাস্কটা পড়ে বেড়োননি কেন? আপনার বয়স তো বাড়ছে।"
"আর যাই করিস, বুড়ো বানাস না ভাই। সবে পয়তাল্লিশ। এখনই তোর বৌদি ঘরে বুড়ো বুড়ো করে, তোরা আবার বাইরে শুরু করিস না।"
"হা হা।"
"আরে পকেটে আছে। গরুর মত কতক্ষণ মুখে ঝুলিয়ে ঘোরা যায়? তাই খুলে রেখেছি।"
"পড়ে নিন। কোথায় কে ভাইরাস নিয়ে ঘুরছে কে বলতে পারে?"
"হুম.... পড়ব পড়ব। তুই জিনিসগুলো মেপে দে।"
     কাঁচা সবজি নিয়ে বাজার থেকে বেড়োনোর মুখে পুলিশ হাত তুলে দাঁড় করালো। 
"দাদা মাস্কটা?" এক অফিসার জিজ্ঞাসা করলেন।
"এই এই তো।" পকেট থেকে বের করে মাস্কটা পড়ে নিলাম।
"দাদার ছেলে মেয়ে ক'টি?"
"একটাই। কেন?"
"না। আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল।"
"কী বলতে চাইছেন?"
"ও আপনি বুঝবেন না। বোধ বুদ্ধি তেমন থাকলে তো আমাদের চিন্তা ও কাজ দুটোই কম হত। তা বাজার হল?" 
"হ‍্যাঁ।"
"এটুকুই? এটুকুতে ক'দিন চলবে?"
"চলে যাবে ক'দিন।"
"মাছ নিলেন?"
"হ‍্যাঁ।" 
"ক'দিনের জন‍্য?"
"আজকের জন‍্য।"
"কালকেরটা?"
"আগামীকাল আসব আবার।"
"মানে রোজ বেরোতেই হয়। এই এমার্জেন্সির বাজারেও রোজ বাজারে আসতেই হবে, তাই না?"
"বাসি খাবার খেলে আমার শরীরটা আবার খারাপ করে।"
"বুঝলাম। তা পটল পাননি নিশ্চয়ই?"
"না। শুনলাম আপনারা বাজার থেকে সব পটল কিনে নিয়েছেন।"
"হ‍্যাঁ। তবে সবই আপনাদের মত কিছু লোকের জন্য।" তারপর গলা তুলে হাঁক পাড়লেন, "কই রে অতনু কোথায় গেলি? মালা আর পটলটা নিয়ে আয় দাদার জন্য।"
     আবার মালা কেন? পটলের সাথে মালা ফ্রী নাকি!
     দেখলাম একটা কনস্টেবল গোত্রের একটি ছেলে , অতনুই হবে, এক হাতে একটা রজনীগন্ধার মালা আর এক প‍্যাকেট পটল নিয়ে এলো। আড়াইশ'র মত হবে। যাক বেশি দেয়নি। অন্তত তাড়াতাড়ি ফুরোবে।
     পুলিশ অফিসারটি মালাটি পড়িয়ে আমার হাতে পটলের প‍্যাকেটটা ধরিয়ে দিলেন। একটা ফটোও তুললেন। তারপর আমার নামটা নোট করে নিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলেন।
     খানিক কৌতূহল নিয়েই বাড়ি ফিরলাম। বউকে বললাম সব। কে জানে, কী মাথায় ঘুরছে এদের!
     দুপুরের ভাতঘুমটা একটু বেলা গড়ানোর পরে শুরু হয়েছিল। ভাঙল বউয়ের ডাকে। ফেসবুকে ছবি ভাইরাল।
     আমার মত আরও বেশ কয়েকজনের ছবির কোলাজ। সকলের গলায় রজনীগন্ধার মালা আর হাতে পটলের প‍্যাকেট।
     ছবির ক‍্যাপশানে, যারা করোনার বাজারে পটল তুলতে উদ্গ্রীব।
     যাঃ ক'দিন আর ঘর থেকে বেড়োনো যাবে না। ক'টাদিনের বাজার যদি এক সাথে করে নেওয়া যেত! ও বাসি খাবারেই না হয় কাজ চালিয়ে নেওয়া যেত।।

Comments

Popular posts from this blog

"হে মোর দুর্ভাগা দেশ"

’মরুবৃক্ষ'

"মনের মানুষ"